কবি পরিচিতিঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ (৭ই মে, ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকু্র, মাতার নাম সারদা দেবী, পিতামহের নাম প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং পিতামহী দিগম্বরী দেবী। তিনি বাবা-মার চতুর্দশতম সন্তান এবং পুত্রদের মধ্যে অষ্টম। বাল্যকালে রবীন্দ্রনাথকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরমাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হলেও তিনি বেশিদিন স্কুলের শাসনে থাকতে পারেননি। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেননি, গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তাঁর পদচারনা এক বিস্ময়ের বস্তু, তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই অসামান্য প্রতিভার অধিকারি। বাল্যকালেই তাঁর কবি প্রতিভার উন্মেষ ঘটে ছিল। মাত্র পনের বছর বয়সে তাঁর বনফুল কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি এবং সমাজ-সংস্কারক। কাব্য, ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান ও সাহিত্যের সকল শাখাই ছিল তাঁর অসামান্য অবদান। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশরাজ কবিগুরুকে ‘ নাইট ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ (৭ আগস্ট, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিতঃ
কবিতাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে মানসী, সবুজের অভিযান, সোনার তরী, ১৪০০ সাল, চিত্রা, পরিচয়, চৈতালি, বলাকা, কল্পনা, খেয়া ও ক্ষণিকা ইত্যাদি।
ছোটগল্পঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প গল্প হল কঙ্কাল, নিশীথে, মণিহারা, গুপ্তধন, ক্ষুধিত পাষাণ, স্ত্রীর পত্র, নষ্টনীড়, কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, সমাপ্তি, অপরিচিতা, দেনাপাওনা, মুসলমানীর গল্প ইত্যাদি।
উপন্যাসঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত উপন্যাস গুলো হলঃ বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠান সমূহঃ
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ১৯০১ সালে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে ব্রক্ষচর্যাশ্রম নামক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯২১ সালে “বিশ্বভারতী” বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
রবীন্দ্র সেতুঃ রবীন্দ্র সেতু (পূর্বনাম হাওড়া ব্রিজ) হুগলি নদীর উপর অবস্থিত কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতুগুলির মধ্যে অন্যতম হল রবীন্দ্র সেতু। ১৮৭৪ সালে প্রথম হাওড়া সেতু নির্মিত হয়। পরে ১৯৪৫ সালে পুরনো সেতুটির বদলে বর্তমান বহির্বাহু সেতুটির উদ্বোধন হয়। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন সেতুটির নাম পরিবর্তন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রবীন্দ্র সেতু রাখা হয়।
রবীন্দ্রসদনঃ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত একটি ঐতিহ্যবাহী সরকারি প্রেক্ষাগৃহ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হল রবীন্দ্রসদন (পূর্বনাম রবীন্দ্রস্মরণী)। এটি দক্ষিণ কলকাতার নন্দন-রবীন্দ্রসদন সাংস্কৃতিক চত্বরে অবস্থিত।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ঃ কলকাতার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬২ সালের ৮ মে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল এই বিশ্ববিদ্যালয়।
নিয়মিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি সহ শিক্ষা বিষয়ক আপডেট পেতে ডেইলি স্টাডি নিউজ ডট কম শিক্ষা বিষয়ক ব্লগের ফেসবুক পেজ এ লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। প্রকাশিত তথ্য সমূহ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত।